বাংলাসাহিত্যে যৎকিঞ্চিত ভ্রমণ থাকায় আমাকে নিয়ে অনেকের অনেক ধরনের প্রত্যাশা। কেউ ভাবেন আমি গতানুগতিক কবিতা লিখবো এবং তাদের (গতানুগতিক কবি) নেতৃত্ব দিব। তাদের যুক্তি এরই মধ্যে আমার জীবনের অনেকাংশ বিনিয়োগ হয়েছে সাহিত্যে এবং আমার ত্যাগের মূল্যায়ণ হয় নাই। তার কারণ বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে আমি কবিতার আবেগকে অস্বীকার করেছি। আবেগের বাইরে কবিতা হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন কবিতা নিজেই বিজ্ঞান। অথবা কবিতায় বিজ্ঞান নতুন নয়। এসবের জবাব আমি সাহিত্য আসরগুলোতে দেশেবিদেশে অনেক বারই দিয়েছি। আমার অনেকগুলো গ্রন্থেও তার জবাব দেয়া আছে। আবার কেউ কেউ ভাবেন, কবিতার ফিলসফিক্যাল টার্ম অনেক শক্তিশালী। আমার কবিতায় ফিলসফির চর্চা তারা প্রত্যাশা করেন। অন্তত কবিতার ফিলসফি তো থাকতে হবে। আমি যখন বলি বিজ্ঞান কবিতা বিজ্ঞান নির্ভর। এখানে ফিলসফি থাকবে না। থাকবে প্রমাণিত সত্যের চর্চা। ফিলসফি জিনিসটাই বিজ্ঞান যুগে বাতিল করা হয়েছে। স্বয়ং স্টিফেন হকিং এটাকে বাতিল বলেছেন। যুক্তি ও বুদ্ধির আলোকে ফিলসফির যাত্রা শুরু। সেটাই পরীক্ষাগারে বিজ্ঞান হয়েছে। এখন আর পেছনে যাবার সুযোগ নেই। তাই আমি তাদের প্রত্যাশা নাকচ করতে বাধ্য হই। অবশ্য আমিই প্রথম থেকেই ফিলসফি বাতিলের কথা বলে আসছি। আমার বিজ্ঞান চর্চার পথে সুপরামর্শদাতা বন্ধু, লোক সংস্কৃতির গবেষক, সিলেটি নাগরীবিদ মোস্তফা সেলিমের সঙ্গে এক আলোচনায় তাঁর এক প্রশ্নের আলোকে আমার মাথায় প্রথম এই বাতিল সংশ্লিষ্ট জবাব আসে। অনেক বছর পরে জানলাম স্টিফেন হকিং আরো আগেই এই জবাব দিয়ে গেছেন। তিনিই প্রথম ফিলসফিকে বাতিল বলেছেন।
ফিলসফি বাতিলের পক্ষে দাঁড়ানো ভাববাদের এই দেশে সহজ কথা নয়। ভারতবর্ষে দার্শনিকদেরও অভাব নেই। দর্শনের ভক্তকূল এখানে জটলা পাঁকিয়ে আড্ডা দেন। অনায়াসে তারা আমাকেই পারলে নাকচ করে দেন। আবার একদল আছেন তারা বিজ্ঞানেও ফিলসফি খোঁজে পান। তখন এখানেও ফিলসফি জিনিষটাই বাতিল বলা ছাড়া আমার আর কিছু করার থাকে না। তখন আমি একা হয়ে যাই। আবার আমি একাই হাঁটি। ভাবি আমার জীবনের দীর্ঘ ভ্রমণ এখনো শেষ হয়নি! যারা সঙ্গে আছেন তাদের নিয়েই যেতে হবে আরেকটু পথ। যে পথে আমার শেষ স্পন্দন বন্ধনহীন ভাবে এঁকেবেঁকে চলে গেছে।
কবিতায় বিজ্ঞান চর্চার বিষয়টি ভাব,ভাষা ও বাণীর বিজ্ঞানমনস্কতা এবং উপমা,উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পের বিজ্ঞান গ্রাহ্যতা মাত্র। আমি জীবনকে বিজ্ঞানে শিল্প ভেবে থাকি। বিজ্ঞানকাব্যতত্ত্ব ও সাবলীল ছন্দ’র পাশাপাশি আমি বিজ্ঞানশিল্পতত্ত্বও উপস্থাপন করেছি। আমার অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদ সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদ কিভাবে
সুখ সমৃদ্ধি আনবে?
আসুন আমরা তা একবার ভেবে দেখি।
অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদ আমার প্রবর্তিত নতুন আলোর রেখা। মানব সমাজে নতুন সাম্য প্রতিষ্ঠা করবে এই অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদ।
অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদ সমিতিভিত্তিক রাষ্ট্রতত্ত্ব। মালিক শ্রমিক ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পদ তিনভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছে এই অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদে। একই সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের জন্য ফিক্সডিপোজিট করা হবো। প্রত্যেকের নামে ১কোটি রাখা হবে। এই টাকার মধ্যে প্রচলিত হারে ইন্টারেস্ট পাবেন প্রত্যেক নাগরিক। আবার লোন নিয়ে কোম্পানি ভিত্তিতে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলবে উদ্যোক্তা জনগণ। আবার এর লভ্যাংস তাদের প্রত্যেকের ঘরে যাবে। ১ভাগ যাবে সরকারের ঘরে। আবার ১ ভাগ পাবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। ১ভাগ উদ্যোক্তাদের থাকবে। এভাবে মানুষ টাকার মধ্যে ঘুমাবে। সুখের ঠিকানা খোঁজে পাবে মানব সমাজ অর্থনৈতিক বিজ্ঞানবাদে। এমন স্বপ্নের দেশ হবে বিজ্ঞানদেশ।
আমি মনে করি, বিজ্ঞানদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন বিজ্ঞান সমাজ দরকার তেমনি বিজ্ঞান সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিজ্ঞানকে মননে অন্বেষণে গ্রহণ করতে হবে।